বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত বিডিআর বিদ্রোহ বা ‘পিলখানা হত্যা মামলা’র রায়ে ২৪২ জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া যাবজ্জীবন কাড়াদণ্ড দেওয়া হয়েছে ১৫৫ জনকে। এর মধ্যে নাসিরউদ্দিন পিন্টু এবং তোরাব আলীকে যাবজ্জীবন কাড়াদণ্ড দিয়ে ৫ লক্ষ টাকা করে জরিমানা ধার্য করেছেন আদালত।
ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান রায় ঘোষণা করছেন। সকাল ১০টা থেকে এই মামলার রায় ঘোষণার কার্যক্রম শুরু হয়। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল কালের কণ্ঠকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ইতিমধ্যে আসামিদের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে হাজিরা করা হয়েছে। এ উপলক্ষে কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে আশপাশের এলাকা।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের প্রায় চার বছর আট মাস পর এ ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হচ্ছে। গত ৩০ অক্টোবর মামলার রায় ঘোষণার তারিখ থাকলেও রায় প্রস্তুত না হওয়ায়, ওইদিন রায় ঘোষণার জন্য ৫ নভেম্বর নতুন তারিখ ঠিক করা হয়। এর আগে গত ২০ অক্টোবর পুরান ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসার পাশে কেন্দ্রীয় কারাগারসংলগ্ন মাঠে ঢাকার জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাসে আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক শেষ হয়।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল গণমাধ্যমকে বলেছেন, ইতিহাসে এত বড় মামলা আর কখনো হয়নি। মামলায় সাড়ে আট শ আসামির বিষয়ে প্রায় সাড়ে ছয় শ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। মাত্র দুই সপ্তাহ আগে মামলার বিচার কাজ শেষ হয়েছে। তাই এ মামলায় রায় প্রস্তুত করতে সময় লেগেছে।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ জন সেনাকর্মকর্তাসহ ৭৪ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। এ ঘটনায় প্রথমে রাজধানীর লালবাগ থানায় হত্যা এবং বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। পরে এসব মামলা নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তর করা হয়। এ মামলায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২৩ বেসামরিক ব্যক্তিসহ প্রথমে ৮২৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করে। পরে সম্পূরক অভিযোগপত্রে আরো ২৬ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়। এ ছাড়া বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় প্রথমে ৮০৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট প্রদান করে সিআইডি। পরে আরো ২৬ জনকে অভিযুক্ত করে মোট ৮৩৪ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। দুই মামলার বিচার একইসঙ্গে চলে।
মামলায় ২০ জন আসামি পলাতক রয়েছেন। বিচার চলার সময়ে বিডিআরের ডিএডি রহিমসহ চার আসামির মৃত্যু হয়। জামিনে আছেন ১৩ জন। আজ ৮১৩ জন কারাবন্দি আসামির বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হবে। মামলায় আসামিদের মধ্যে বিএনপি নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীও রয়েছেন। বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় ইতিমধ্যে এ বাহিনীর নিজস্ব আইনে বিচার শেষ হয়েছে। তবে ৭৪ জনকে হত্যা, লুণ্ঠনসহ অন্য অভিযোগের বিচার প্রচলিত আইনে পরিচালিত হয়েছে।